ছবি : সুদীপ চন্দ

সুদীপ চন্দ ও রানা চক্রবর্তীকলকাতা : লড়াইয়ের অদম্য জেদের জন্য পরিচিত লাল-হলুদ। গত কয়েক বছর অবশ্য এই পরিচিতিতে মরচে পড়েছিল। বরং উল্টোটাই হয়েছে এ মরসুমে এখনও অবধি ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। ডুরান্ড সেমি ফাইনালে নর্থইস্টকে হারিয়ে ১৯ বছর পর ডুরান্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল। এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে জিতল কার্লেস কুয়াদ্রাতের ছেলেরা। বলতে বাধ্য করছে এ যেন ইস্টবেঙ্গল সত্যিই সেই পুরোনো ইস্টবেঙ্গল। যারা লড়াই করতে জানে, ফিরে আসতে জানে। গত ৪ বছরের ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যার কোনো মিলই নেই। আর এই লড়াইকে পুঁজি করেই ২ গোলে পিছিয়ে থেকেও ট্রাইবেকারে ৫-৩ গোলে নর্থ ইস্টকে হারিয়ে ১৯ বছর পরে ডুরান্ড ফাইনালে ট্রফি থেকে আর এক বিন্দু দূরে শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাব।এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই বেশ ছন্নছাড়া মনে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। ডিফেন্স থেকে মাঝমাঠ কোনো কিছুই ঠিক ছিল না। ম্যাচের ২২ মিনিটে নর্থইস্টের জাবাকো স্কোর গোল করেন। কর্নার ক্লিয়ার করার পর লেফট উইং থেকে ফাল্গুনী সুন্দর বল বাড়ান। বাঁকানো ক্রস ধরে জাবাকো কিপারকে অতিক্রম করে বল জালে জড়ান। লাল-হলুদ গোলকিপার কিপার প্রভসুখান গিল ডাইভ দিয়ে গোল সেভ করতে পারেননি।

ছবি : সুদীপ চন্দ

এরপর গোল পেতে মরিয়া থাকে ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে নিশুর বাঁ দিক থেকে ক্রস করার সুযোগ ছিল কিন্তু নর্থইস্টের ডিফেন্সের কাছে আটকে যায়। ৩৯ মিনিটে আবার মান্দার বাঁদিকের উইং থেকে একটি ইন ক্রস করে, সিভেরিও তাঁর মাথা ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হেডারে তিনি কিছু করতে পারেননি। বল বাইরে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ব্যবধানে। ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দু’টি পরিবর্তন করে। শৌভিক চক্রবর্তীকে নামানো হয় নিশুর পরিবর্তে। বোরহা হেরেরাকে নামানো হয় পারদোর পরিবর্তে। যদিও পরিবর্তনেও লাভ হয়নি ইস্টবেঙ্গলের। ৫৭ মিনিটে নর্থ ইস্ট দলের ফাল্গুনীর জোরালো শটে দ্বিতীয় গোল পায় নর্থ ইস্ট। ইস্টবেঙ্গল আরও বেশি দিশেহারা হয়ে যায়। যদিও ৭৭ মিনিটে লাল হলুদের ব্যবধান কমে আর ত্রাতা সেই ব্রাজিলিয়ান ক্লেটন সিলভা। তার দারুন ক্রস থেকে নাওরেমের শট দীনেশের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়।অতিরিক্ত সময় ৮ মিনিট দেওয়া হয়। ৯৬ মিনিট- হলুদকার্ড দেখেছিলেন নর্থইস্টের জাবাকো। ফের তিনি ফাউল করে হলুদকার্ড দেখলেন। ফলে ডাবল ইয়েলো (লালকার্ড) দেখে মাঠ ছাড়তে হয় জাবাকোকে। দশ জন হয়ে যায় নর্থইস্ট। এরপরেই ৯৭ মিনিটে ২-২ করে ফেলে ইস্টবেঙ্গল। গোল করলেন ডার্বির নায়ক নন্দকুমার। ডান দিক থেকে প্রাথমিক শটটি দক্ষতার সঙ্গে মিরশাদ সেভ করেছিল। কিন্তু ফিরতি বল ধরে ক্লেটন বাঁ-দিক থেকে শট নেন, নন্দ সেই বল ধরে হেড করেন।

ছবি : সুদীপ চন্দ

ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত বলেন, “প্রথম একাদশে পরিবর্তনের কারণ, ফুটবলাররা ক্লান্ত ছিল। টানা ম্যাচ খেলেছে। সে কারণে সকলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের কাছে এটা প্রাক মরসুমও। সেই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হত। বিশেষ করে সৌভিক ও বোরহা খুবই ক্লান্ত ছিল।” ম্যাচ গড়ায় ট্রাইবেকারে। টাইব্রেকারে অনবদ্য ইস্টবেঙ্গলের তরুণ গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল।

ছবি : রানা চক্রবর্তী

সেখানে নর্থইস্টের হয়ে গানি গোল করলেন, এবং ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ক্লেটন, নন্দকুমার, ক্রেসপ্রো, বোরহা আর মহেশ গোল করলেন। লাল হলুদের গোলকিপার গিল নর্থইস্টের গোগুইয়ের পেনাল্টি বাঁচান। বাঁ-দিকে দুর্বল শট পার্থিবের এবং গিল সহজে সেভ করেন। কিন্তু সেটা বাতিল হয়ে যায়৷ আবার শট মারেন পার্থিব কিন্তু সেটা ক্রসপিসে লেগে বাইরে চলে যায়। ইস্টবেঙ্গল কোচ বলেন, “প্লেয়ারদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। ওদের হার না মানা মানসিকতার ওপর ভরসা ছিল, প্লেয়ারদের বলেছিলাম, হারার আগে হারবে না, যতক্ষণ মাঠে থাকব, লড়াই করব। সেটাই করেছে ছেলেরা। দুটো খুব বাজে গোল হজম করেছি। তবুও প্লেয়ারদের ওপর বিশ্বাস ছিল। ৯০ মিনিট অবধি যা কিছু হতে পারে। ওরা সেটাই করে দেখিয়েছে।”  অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল, আনন্দের ডালি গায়ে মেখেই যুবভারতী ছাড়লো লাল হলুদ জনতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven − 8 =