স্বপ্নদীপকে বাঁচাতে গিয়েও পারেননি কাশ্মীরি ছাত্র, মৃত্যুর রাতে আর কী হয়েছিল?
স্বপ্নদীপকে বাঁচাতে গিয়েও পারেননি কাশ্মীরি ছাত্র

অভীক পুরকাইত,যাদবপুর –যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যুরহস্যে নতুন মোড়। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে মৃত্যুর আগে ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করেছিলেন স্বপ্নদীপ। তিনি নাকি বার বার সকলকে বলছিলেন, ‘‘আমি সমকামী নই।’’ হস্টেলের অন্য ছাত্ররাও তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা স্বপ্নদীপের এই আচরণের কথা জানাতে রাতেই ডিন অফ স্টুডেন্টসের সঙ্গে যোগাযোগও করেন বলে দাবি। প্রথম বার কথা হলেও রাত ১১টার পরে তিনি আর ফোন ধরেননি বলে অভিযোগ। অন্য ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্যই পুলিশ জানতে পেরেছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পদাধিকার বলে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও বটে।তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, হস্টেলের তিন তলা থেকে পড়ে যাওয়ার সময় স্বপ্নদীপের হাত ধরে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন হস্টেলেরই এক কাশ্মীরি পড়ুয়া। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। স্বপ্নদীপ মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের যে ঘরে থাকছিলেন, তার উপরের তলাতেই থাকেন এই কাশ্মীরি ছাত্র। বুধবার রাতে নীচের তলা থেকে কথাবার্তা শুনে তিনি নেমে আসেন। স্বপ্নদীপকে পড়ে যেতে দেখে তিনি বাঁচানোরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর হাত ফস্কে নীচে পড়ে যান স্বপ্নদীপ। ওই দিন হস্টেলে অনেক ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। এ-২ ব্লকের নীচে হস্টেলের একটি বৈঠক চলছিল। ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্র হস্টেলে ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বপ্নদীপ বুধবার রাতে বার বার শৌচালয়ে যান। তাঁর পরনে ছিল গামছা। কোনও কারণে তিনি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। স্বপ্নদীপ যে সমকামী নন, এ কথা তিনি তাঁর মাকে ফোনেও জানিয়েছিলেন। রাতে মায়ের সঙ্গে ছেলের ফোনে কথা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুন্ডু। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, স্বপ্নদীপ মাকে জানিয়েছিলেন, তিনি ভাল নেই। শীঘ্রই যাদবপুরে এসে তাঁকে যেন নিয়ে যাওয়া হয়। মায়ের কাছে সেই আর্জিও জানিয়েছিলেন। স্বপ্নদীপের পরিবারের দাবি, কোনও ভাবেই তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন না। বরং তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন পরিবারের সদস্যেরা।র‌্যাগিং’য়ের অভিযোগও উঠেছে। পরিবারের তরফে লিখিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ জানানো হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।স্বপ্নদীপের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়ার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই ছাত্রের মাথার বাঁ দিকের হাড়ে চিড় ছিল। বাঁ দিকের পাঁজরের হাড়ও ভেঙে যায়। সেই কারণেই অভ্যন্তরীণ আঘাত গুরুতর হয়ে উঠেছিল। ভেঙে গিয়েছিল কোমরও।রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর শরীরে মদ্যপানের কোনও প্রমাণ মেলেনি।তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১১.৪৫ মিনিট নাগাদ হস্টেলের ব্যালকনি থেকে পড়ে যান স্বপ্নদীপ। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, হাসপাতাল থেকে যে কাগজে তাঁদের সই করতে বলা হয়েছে, তাতে ছাত্রের শরীরে আঘাতের উল্লেখ আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − three =