ছবি সংগৃহীত

দেবব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা: ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮সকাল ৯টা, অক্সিজেন দেওয়া হল কবি কে। দেখতে এলেন চিকিৎসক বিধান রায় ,ললিত বন্দ্যোপাধ্যায় ।বাইরে অগণিত মানুষের ভিড় ,দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছে অনুরাগী মানুষের দল। আকাশবাণীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কবির শারীরিক অবস্থা জানতে পারছে। কবির শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহেরু। বাংলার ইংরেজ সরকারও নজর রাখছেন কবি শারীরিক অবস্থার দিকে। ঘরে কবির সামনে চলছে তাঁর জীবনের বীজ মন্ত্র “সত্যম ,শিবম, অদ্বৈতম” মন্ত্রোচ্চারণ। ধীরে ধীরে কমে আসছে দেহের উষ্ণতা। ১২:১০মিনিট ,থেমে গেল হৃদস্পন্দন ,থেমে গেল সৃষ্টির কলম । ফুলে ফুলে সজ্জিত গুরুদেবের নিথর শরীর। তিল ধারণের জায়গা নেই জোড়াসাঁকোয়। সকলেই কবিগুরুকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চান। অবশেষে পুস্পে সজ্জিত শকটে কবির দেহকে নিয়ে যাওয়া হল নিমতলা মহাশ্মশানে । পূরণ হলো না বিশ্বকবির শেষ ইচ্ছা ।পূরণ হলো না তাঁর নশ্বর দেহ শান্তিনিকেতনের প্রকৃতির কোলে বিলীন করে দেওয়ার ইচ্ছা। নিমতলা মহাশ্মশানে পঞ্চভূতে বিলীন হলেন কবি।বরাবরই সুস্বাস্থের অধিকারী ছিলেন কবিগুরু ।কিন্তু শেষের চার বছর মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন ।তবুও সৃষ্টির নেশায় মেতে থাকতেন কবি ।অসুস্থতাকে উপেক্ষা করেই ১৯৪০ সালে পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর কাছে কালিম্পং এ যান রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু বেশিদিন কালিম্পং-এর জল হাওয়া সহ্য করতে পারলেন না, কয়েকদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে ফিরে এলেন কলকাতায়। কবির ইচ্ছে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার ,সেখানে তাঁর অনেক কাজ অসম্পূর্ণ হয়ে আছে ।অসুস্থ শরীরে কবি পৌছলেন শান্তিনিকেতনে ,তাঁর শান্তির জায়গায় ।কিন্তু কবির অসুস্থতা আরও বাড়তে লাগলো। তবুও থেমে থাকল না সৃষ্টির কলম ,লিখলেন তাঁর শেষ অভিজ্ঞতার কথা ʼরোগশয্যাʼ, ʼআরোগ্যʼ, ʼজন্মদিনের মধ্য দিয়ে। ডঃ নীলরতন সরকার বহুদিন ধরেই চিকিৎসা করছিলেন কবিগুরুর ।কিন্তু সেই সময় তিনি গিরিডি থাকায় ডঃ বিধান চন্দ্র রায় দেখলেন কবি কে এবং তার সিদ্ধান্তে ঠিক হলো অস্ত্রোপচার করা হবে গুরুদেবর। যদিও ডাক্তার সরকার কোনদিনই চাননি কবিগুরুর অস্ত্রোপচার হোক। তাঁকে না জানিয়েই চলল কবির অস্ত্রোপচারের কাজ। সফলতা এলোনা । আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন গুরুদেব। চলে গেলেন কবি চিরঘুমের দেশে।রেখে গেলেন তাঁর সাহিত্য সম্ভার যা বাঙালিকে তথা বিশ্ববাসীকে সমৃদ্ধ করবে। যুগ যুগ ধরে সমৃদ্ধ করবে শিক্ষানুরাগী মানুষের মনকে। চলে গেছেন কবি, কিন্তু আজও বাঙালি প্রতিনিয়ত অনুভব করে তাঁর উপস্থিতি মনের মধ্যে, তাদের দুঃখে, তাদের সুখে, তাদের আনন্দে, তাদের বেদনায় ,তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্যে। কবির গানের মধ্যে খুঁজে পায়, কবিতার মধ্যে খুঁজে পায় জীবন দর্শন । কবি চলে গিয়েও বেঁচে আছেন আমাদের মনের মনিকোঠায়। তাই কবির গানের মধ্য দিয়েই বলা যায় –

“তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি ,
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি”।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight + 17 =