ছবি সংগৃহীত

রানা চক্রবর্তীকলকাতা : কলকাতা ময়দানের বর্ণময় চরিত্র ফুটবলার মোহাম্মদ হাবিব আজ আমাদের ছেড়ে অনন্ত লোকে যাত্রা করবেন। দীর্ঘদিন তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যে হাবিব মাঠে নামলে লড়াই ছাড়া কিছু বুঝতেন না, শেষ হয়ে গেল তাঁর লড়াই। ১৭ ই জুলাই ১৯৪৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে হাবিবের জন্ম। দাদা আজমের পদাঙ্ক অনুসরণ করে হাবিব ও ফুটবলে আকৃষ্ট হয়। ১৯৬৬ সালে প্রায় একার চেষ্টায় হায়দ্রাবাদকে সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন করে ফুটবল থিউরিদের চোখে পড়েন। ওই বছরই তিনি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার জন্য সই করেন। দু’বছর ওখানে খেলে ৬৮ ও ৬৯ সালে উনি খেলেন মোহনবাগানে। ১৯৭০ সালে তিনি আবার ফিরে আসেন পুরনো ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে এবং খেলেন ১৯৭৪ পর্যন্ত। ১৯৭৫ এ এক বছর মোহামেডান নিয়ে খেলে উনি চলে যান মোহনবাগানে ১৯৭৬ সালে এবং খেলেন ১৯৭৯ পর্যন্ত। ১৯৮০, ৮১ ও ১৯৮২ তিনি খেলেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও আবার ইস্টবেঙ্গল। ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মোহনবাগানের ১০ নম্বরকে খুঁজে ছিলেন পেলে। সেই ১০ নম্বর, যিনি ম্যাচ শুরুর আগে প্রতিপক্ষ পেলের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হননি। এক জুনিয়র সতীর্থকেও নাকি বাধা দিয়েছিলেন। সেই ১০ নম্বর হাবিবের যুক্তি ছিল, পেলে হোক আর যেই হোক প্রতিপক্ষের সঙ্গে ম্যাচের আগে হাত মেলানো যাবে না। সৌজন্য বিনিময় হবে ম্যাচের পর। অথচ তাঁর খেলায় মুগ্ধ পেলে নিজেই ম্যাচের পর আলাপ করতে চেয়েছিলেন। খেলা ছাড়ার পরে দীর্ঘ ১০ বছর তিনি টাটা ফুটবল একাডেমীর সাথে কোচ হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে যান পরবর্তীকালে গৃহবন্দী হয়ে যান অসুস্থ হয়ে। কোন কর্তৃপক্ষকেই তিনি ভয় পেতেন না। একবার সন্তুষ্ট ট্রফিতে পঞ্জাবি ফুটবলারদের ট্যাকলের নামে সটান মারা লাথি খেয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েছেন। আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। কখনও সেন্টার লাইন পেরোলেই লাথি, চোরাগোপ্তা ঘুসি, কনুইয়ের বিপজ্জনক আক্রমণ হামলে পড়ছে হাবিবের পা, কোমর, ঘাড়, মুখে। তবু পুরো সময় খেলেছিলেন হাবিব। কিন্তু মাঠ থেকে বেরিয়েই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সারা রাত স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল বেহুঁশ হাবিবকে। পরের দিন নিজেই স্যালাইন খুলে হাসপাতালের বন্ডে সই করে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন দলের হোটেলে। মাঠে নেমে গোল করে বাংলাকে জিতিয়েছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন ম্যাচের সেরার পুরস্কারও। এই ম্যাচকেই খেলোয়াড়জীবনের সেরা বলে মনে করতেন হাবিব। তিনি ভারতের একমাত্র প্লেয়ার যিনি তিনটি ডুরান্ডে ফাইনালে গোল করেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে পিএনআরএর বিরুদ্ধে ১৯৭০ ও ১৯৭২ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে মোট চারটি গোল করেন। ছোট ভাই মোঃ আকবর কে সঙ্গী করে কলকাতা লিগে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তিনি বহুবার তার দলকে জয়ের দোরগোরা দেখান। দীর্ঘদিন ভারতের হয়েও তিনি খেলেছেন। ১৯৭০ সালের ব্রোঞ্জ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭২ তিনি দেশকে নেতৃত্ব দেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় ফুটবলে প্রফেশনালিজম দেখান। দীর্ঘ ১৭ বছর ফুটবল ক্যারিয়ারের তিনি ফুটবল ছাড়া আর কোন দিকে মনোনিবেশ করেনি। আজ ১৫ ই আগস্ট ২০২৩-এ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে চিরশান্তির দেশে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

three − one =